Menu
Categories
নব্বই দশকের খাওয়া-দাওয়া
June 16, 2020 কিছু শৈশব

আমরা যারা নব্বই দশকে শৈশব-কৈশোর পার করেছি,  আমাদের নাস্তা পানির ব্যাপারগুলা একটু অন্যরকম ছিল। তখন বার্গার, পিজ্জা, সাব-সান্ডউইচ এতো পপুলার হয়নি। এর মানে এই নয় যে আমাদের  ফাস্টফুড পছন্দ নয়। সময়ের সাথে সাথে এই খাবার গুলো আমাদের খাদ্যতালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

আমরা খেতাম বিচিত্র  সব খাবার । স্কুল থেকে বেরুলে এক মামা দাঁড়িয়ে এক মজার খাবার বিক্রি করতেন । পলিথিন এর মধ্যে বিভিন্ন রকম আচার  দিয়ে তার মধ্যে একটু পানি মিশিয়ে ঝাঁকি। পলিথিনটা তারপর সুঁতো দিয়ে বেঁধে দিতেন। পলিথিন একটু ফুটা করে খাওয়া লাগত। এটাকে স্কুলের ছেলেরা “পাগলা পানি” বলত। এই নামকরণের ইতিহাস জানা নেই।

বাসার সামনে দিয়ে কটকটি ওয়ালা যেত। পুরান ছেড়া জুতা, প্লাস্টিকের বোতল এগুলা দিয়ে কটকটি পাওয়া যেত। স্বাদ ছিল একটু তেঁতো । পুরান জুতা , প্লাস্টিকের বোতল এগুলা পেলেই একজায়গায় জড়ো করে রাখতাম।

আব্বা বাসায় পেপার রাখতেন নিয়মিত । মাস শেষে পেপার দেড় দুই কেজি হত। কেজি ১০-১২ টাকা করে বেঁচা যেত। এই পেপার বেঁচা টাকা স্কুলের টিফিনের বাড়তি খাবারের জোগান দিত।  

বাসার সামনে সন্ধায় একটা বুড়ো লোক গরুর ভূড়ি দিয়ে টিকা বানাত। তিন টাকা করে। সাথে তেলে ভাজা পরোটা দুই টাকা করে। অসম্ভব টেস্টী ছিল। হয়ত খাবারটা এতোটা হেলদী নয়, কিন্তু ওইসময়টাতে এতো হেলথ কনসার্ন গ্রো করেনি।   

বাটার বান আমার খুব প্রিয় ছিল (এখনো আছে)। কিন্তু আব্বা একদম পছন্দ করতেন না এসব বাইরের খাওয়া। একদিন পাড়ার দোকান থেকে বাটার বান কিনে বাসায় ফিরছি চুপিচুপি। উল্টা দিক থেকে হঠাৎ কোথা থেকে বাবা এসে খপ করে হাতটা ধরলেন। তারপর বাসায় নিয়ে দরজা বন্ধ করে ১০ মিলিমিটার ডায়ামিটারের রড দিয়ে খুব পেটালেন। হিসাব মতে এই রড জিনিসটা আমার আজন্ম শত্রু হওয়ার কথা ছিল। কারন অনেক মার খেয়েছি। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন এটা বন্ধু হয়ে গেল। বিল্ডিংয়ের বীমের স্টিরাপ কিংবা কলামের টাই ,কিংবা স্ল্যাব ডিজাইনে এই ১০ মিলি রড আমার প্রথম পছন্দ। ! মনে হচ্ছে শোককে শক্তিতে পরিণত করেছি 🙂 যাইহোক বাটার বান খাওয়া কিন্তু বন্ধ হলনা। লুকিয়ে লুকিয়ে খাওয়া চলতে থাকল। তখন বাবাকে লুকিয়ে খাওয়া, এখন স্ত্রীকে (সুগারের ভয়ে)।

 বাসায় কোন গেস্ট আসলে এক দৌড় দিয়ে একটা ১ লিটার কোক কিনে আনতাম বাসার পাশের “বাকী দোকান” থেকে। কাচের বোতলে ১ লিটার কোক সম্ভবত ২৮ টাকা নিত। কাচের বোতল টা ফেরত দিতে হতো পরে। এখনকার কোকে সেই মজা পাইনা। যদিও আজকাল স্বাস্থ্য সচেতনতায় সব প্রকার কোমল পানীয় খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।  

স্কুলের কাছে এক মামা চটপটি বেচতেন। পাঁচ টাকা প্লেট। এক প্লেট নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে খেতাম। ধীরে ধীরে, যাতে ফুরিয়ে না যায়। খাওয়ার পর পানি খেতাম না। স্বাদটা যেন মুখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ।   আফতাবনগর বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার শেষ মাথায় একটা ফুসকার দোকান আছে যেখানে আমরা এখন খেতে যাই মাঝে সাঝে। কিন্তু ফুসকার তৈরী পদ্ধতি নিয়ে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন দেখার পর থেকে এই খাবারটাও কম খাওয়া হচ্ছে।  

রায়ের বাজারে খাঁন চানাচুর নামে একটা বেকারী ছিল। ওদের চানাচুরটা আমার খুব পছন্দ ছিল। অনেক বাদাম থাকত। আর ঝাল ঝাল একটা ফ্লেভার।  

হাসান শাহ ব্রেডের পাউরুটি পাওয়া যেত। ভোরে ঘুম থেকে উঠে শংকরে ওদের ফ্যাক্টরীতে চলে যেতাম। গরম পাউরুটি কিনতে। সমবাহু ত্রিভূজ ক্রস সেকশনের পাউরুটি। পিংক কালারের পলিথিনে করে বাজারজাত করত। এতো টেস্টী ছিল যে এমনি এমনিই খাওয়া যেত জ্যাম – জেলী –বাটার ছাড়াই।

আরেকটা পছন্দের খাবার ছিল ড্যানিশের কন্ডেন্সড মিল্ক। টিনের কোটার দুই পাশে দুইটা ছিদ্র করা লাগত। একটা দিয়ে ঢেলে চা বানিয়ে বাকীটা  আম্মা ফ্রীজে রাখত। আমি লুকিয়ে ফ্রীজ থেকে বের করে ছিদ্রে মুখ লাগিয়ে পুরাটা একবারে শেষ করে দিতাম।

ঘুগনি ছাড়া মশলা দিয়ে ঝাল্মুড়ী  বেচত । দুই টাকার নিলে একটা কাগজ দিয়ে ফানেল বানিয়ে তার মধ্যে দিত। আর পাঁচ টাকার নিলে কাগজের একটা ঠোংগায়। আহা !

শংকরে একটা হোটেলে বিকেলে খুব ভালো আলুপুরী পাওয়া যেতে। দুই টাকা পিস। একাই পাঁচটা খাওয়া যেত।

বিশেষ কোন অনুষ্টান হলে বছরে এক দুবার আমরা ধানমন্ডিতে কোন রেস্টুরেন্টে চাইনীজ খেতে যেতাম। নুডুলস, স্যুপ এসব খেতাম। কিন্তু অতোটা টানত না কেন জানি।

শীতকালে রাস্তার ধারে ভাপা পিঠা পাওয়া যেত দুই টাকা করে যা অসম্ভব মজা ছিল। বাসায় বানালে এতো মজা লাগতোনা।

বাসায় কিচ্ছু না থাকলে আম্মা আটা আর চিনি পানি গুলে দিয়ে তেলে ভেজে দিতেন। খুব স্বাদ লাগত।

মাঝেমধ্যে আম্মা আর আমি একটু লবন দিয়ে ভাতের মাড় খেতাম। খেতে খারাপ না। কর্ন স্যুপ টাইপের টেস্ট ছিল।

বম্বে স্টিকের একটা চিপ্স ছিল চার টাকা করে দাম। খুব মজা ছিল।

তখন একটা মিমি পাওয়া যেত দশ টাকা দাম ছিল সম্ভবত। এটা তখনকার সব বাচ্চাদের খুব প্রিয় ছিল। আরেকটা পপুলার খাবার ছিল জেমস। কোকোলা ফুডসের।

আর একটা জিনিস প্রিয় ছিল যার কোন তুলনাই নেই। তা হলো পাশের বাসার আন্টির/ভাবীর বানানো যেকোন নাস্তা। যাই দিত ভাল্লাগতো। একটা অতৃপ্তি থেকে যেত। আহা যদি আরেকটু খাওয়া যেত!  

Comments are closed
*