Menu
Categories
প্রথম চাকরীর অভিজ্ঞতা
June 16, 2020 blog

বুয়েট থেকে পাশ করলাম মাত্র। বন্ধুদের মধ্যে যারা সরকারী চাকুরীতে আগ্রহী তারা রিলেভেন্ট বই-পত্র কিনে পড়তে বসে গেছে। যারা বিদেশ যেতে চায় নীলক্ষেত থেকে জিআরই-টোফেলের বই নিয়ে এসেছে। কেউ কেউ বিডিজবসে বিভিন্ন বেসরকারী চাকুরীর জন্য আবেদন করে যাচ্ছে। তেমন রেসপন্স নেই।

আমার ইচ্ছা স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার করার। বিল্ডিং ডিজাইন করে মানুষকে সেবা দেব। বাংলাদেশে প্রচুর ভূল ডিজাইন হয়। কোড মেনে ডিজাইন করলে সেটা নিরাপদ ও ইকোনমিক হয়। তো ডিজাইনার হওয়ার জন্য কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং ফার্মে জয়েন করে এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করতে হয়। ফেসবুকে খুব অল্পদিনের পরিচিত প্রায় ১৭ বছরের সিনিয়র বুয়েটিয়ান এক বড় ভাইকে মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলাম উনার কোম্পানীতে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার পজিসনে কোন ভাকেন্সী আছে কিনা। প্রায় সাথে সাথেই জবাব এল।  পরেরদিন অফিসে যেতে বললেন। মহাখালী ডিওএইচএসের ৩০ নম্বর রোডে।  

আমি পরেরদিন যথাসময়ে সিভি নিয়ে হাজির। সিভিটা এগিয়ে দিলাম। উনি সিভিটা হাতে নিয়ে পাশে রেখে দিলেন।  

বললেন, ক্যারিয়ার প্ল্যান কি?

আমি বললাম, ভাইয়া সরকারী চাকুরী বা বিদেশ যাওয়ার প্ল্যান নাই। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার করতে চাই।

“ভেরী গুড, আগে কখনো ডিজাইন করেছ?”

“না। শুধু বুয়েটে একটা ডিজাইন সেশনাল করেছি।“

“ইটাবসে স্ট্রাকচারের ফাইনাইট এলিমেন্ট অ্যানালাইসিস করতে পারো?”

“হ্যা পারি।”

“তুমি তাহলে কালকে থেকে জয়েন কর। স্যালারী বেশী দিতে পারবোনা। তবে পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে তিন মাস পরে ইনক্রিমেন্ট হবে। আর আমার এখান বুয়েট-কুয়েট-চুয়েট আলাদা কিছু নেই। পিয়ন থেকে শুরু করে সবার সংগে মানিয়ে চলতে হবে।”

ব্যাস ! মাত্র চার মিনিটের ইন্টারভিউতে জয়েন করে ফেললাম।

স্যালারী ইনক্রিমেন্ট বা প্রমোশন নিয়ে কখনো বলতে হয়নি। সময়মত পেয়ে গিয়েছি সবসময় আলহামদুলিল্লাহ।  প্রায় চার বছর চাকুরী করেছি সেখানে। ঠেকে ঠেকে অনেক কিছু শিখা হয়েছে। প্রচুর খাটাখাটনি করতাম। ১০ ঘন্টা অফিস আর ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনা। ইঞ্জিনিয়ারিং এর অনেক বেসিক জিনিস একদম স্ক্রাপ থেকে শিখেছি, ফিল্ডে অ্যাপ্লাই করেছি। ভূল করেছি এবং শুধরে নিয়েছি।  অনেক মেজর প্রজেক্টের সাথে ইনভল্ভ ছিলাম। তারপর ক্যারিয়ারের টানে অন্য কনসাল্টিং ফার্মে মুভ করলাম। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা এখনো আগের মতো। দেখা হলে ভাইয়া সেই আগের মতো করেই কেয়ার করেন-ভালবাসেন। আমার বিয়ের সময় ভাইয়া দেশের বাইরে ছিলেন। তো তিনি অফিস অ্যাডমিনকে আমার তিন মাসের স্যালারী অ্যাডভান্স দিতে বলে যান। আর নিজের ক্রেডিট কার্ডটা রেখে যান যদি আমার ইমার্জেন্সী কোন টাকা লাগে!

ভাইয়ার কাছে ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজাইন এসবের ভাইরে শিখেছি পাবলিক কমিউনিকেশন, ক্লায়েন্ট ডিলিং, প্রেজেন্টেশন আর জীবনবোধ।

ভাইয়ার একটা উক্তি আমার মাথায় বাজেঁ সবসময় – “ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তোমার সার্ভিস এতো বেশী অ্যাভেইলেবল করবেনা- যেন মানুষ এটাকে সস্তা না ভাবে, আর নিজেকে এতোটা উচ্চতাতেও উঠিয়ে রাখবেনা কখনো – যাতে কেউ তোমাকে রিচ করতে না পারে। এর মাঝামাঝি থাকাটাই লাইফ। ”

Comments are closed
*