ঈদ আনন্দ – ঈদ বেদনা

eidকয়েক বছর আগের  ঘটনা। পনের রোজা পর্যন্ত ক্লাস হয়েই বুয়েট ছুটি হয়ে গেল। আমার বন্ধু সিরাজ বাড়ি চলে যাচ্ছে।  ওর  বাবা ঢাকায় একটা দোকান করে। মুদি দোকান। বাবা বলল, তুই চলে যা আমি চাঁন রাইতে আসুম। ও চলে গেল । এক এক করে সবগুলো রোজা শেষ হয়ে এলো। ২৯ রোজা এলো। চাঁদ আজকে উঠবে না কালকে উঠবে এ নিয়ে সিরাজের অনেক  জল্পনা কল্পনা। আজকে উঠলেই ও  খুশী। কারন তাহলে আজকে রাতে বাবা চলে আসবে। কিন্তু চাঁদ মামা কথা শুনল না। আরেকটা রোজা রাখতেই হল।

ঈদের দিন সকাল। আজকে সিরাজের জন্মদিন।  মোবাইলে অনেক কল আর মেসেজ আসছে। বন্ধুরা ঈদ মোবারক আর শুভ জন্মদিন জানাচ্ছে। বাবার জন্য অপেক্ষা করছে  ওরা । বাবা এলে একসাথে নামাজে যাব। তারপর সেমাই দিয়ে জন্মদিন পালন করবে । একঘন্টা যায় দু’ঘন্টা যায় বাবা আর আসেনা। মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছেনা বাবাকে। বিকাল হয়ে গেল। কিন্তু বাবা যে এখনো আসেনি। ওর  ছোটবোন মুখ গোমড়া  করে বসে আছে। বাবা আসতে ওর জন্য নতুন জামা আনার কথা। নতুন জামা ছাড়া ঈদ করবে না সে। মাও কিছু মুখে দিচ্ছেন না। বাবা এলে একসাথে খাবেন। লোকটা সারা বছরতো একলাই খায়। আজকে ঈদের দিনটা তাই সবাই মিলে খাবে । কিন্তু বাবার তো কোন খবরই নেই। কি যে হল বাবার!

সন্ধ্যার দিকে বাবা এলো। তবে লাশ হয়ে। মুহুর্তে বাড়ির পরিবেশ পাল্টে গেছে। সিরাজের বাড়ি খুলনায় । কয়েকটা বাস আসে এদিকে।  আজকে ওরা ভাড়া বাড়িয়েছে। তাই সিরাজের  বাবা লোকাল বাসের ছাদে করে আসছিলেন। সাথে ছিলো ওর এক মামা  । ওভারটেক করতে গিয়ে  গাড়ি এক্সিডেন্ট করে পথে। ঢুলুঢুলু চোখে ঘুমিয়ে পড়া সিরাজের বাবা  ছিটকে গিয়ে অন্য একটি চলন্ত বাসের চাকার নিচে পড়ে। থেঁতলে যায় উনার  মাথা।

স্রষ্টা কী একই দিনে মানুষকে আনন্দ ও বেদনা দুটোই দিতে পারেন? সিরাজকে দিয়েছেন।

Leave a Reply