মৃত মানুষের ফেসবুক একাউন্ট

facebook-deadএই গল্পটা আমার ব্যাচের খুব ক্লোজ এক বন্ধুর।
ও খুব চুপচাপ স্বভাবের ছিল। এইজন্য বুয়েটে তেমন কেউ ওকে চিনত না। কিন্তু ওর এই চুপচাপ স্বভাবের ভিতরে বসবাস ছিল প্রাণোচ্ছল এক মানুষের । ও পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল। সব বুঝে পড়ত। আমি মাঝে মাঝে ওর রুমে যেতাম পড়া বুঝতে। এভাবে যেতে যেতে ওর সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। ওর অনেক গোপন কথাবার্তা আমার সাথে শেয়ার করতো।

আজকে যেই ঘটনাটা বলবো এটা অনেকের কাছে অদ্ভুত কিংবা মানবতাহীন কিংবা কিছুটা সাইকোপ্যাথিক বলে মনে হতে পারে।

আমার এই বন্ধুটির স্বভাব ছিল মানুষের ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করা। প্রচলিত অর্থে হ্যাক নয়। ও মানুষের ফেসবুকে দেয়া সিকিউরিটি কোয়েশ্চেনের উত্তর খুঁজে খুঁজে বের করতো। ট্রায়াল এন্ড এরর মেথডে। তারপর একাউন্ট ঢুকে পড়ত । দেখত যে সে কার সাথে যোগাযোগ করে। কার সাথে মেসেজিং করে এসব। কি চ্যাট করে। কাকে ব্লক করে রেখেছে এসব। দেখে ও আনন্দ পেতো খুব।

কিন্তু একদিন অদ্ভুত একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। ও আসলে জীবিত মানুষের ফেসবুকে ঢুকত না। ঢুকত মৃত মানুষের ফেসবুকে। পরিচিত কেউ মারা গেলে , ও সিকিউরিটি কোয়েশ্চেন, পাসওয়ার্ড গেস করে বা অন্য যে কোনভাবে তার একাউন্টে ঢুকত। ঢুকে দেখত মৃত্যুর পর তার কাছে মানুষজন কি ধরনের মেসেজ পাঠায়। বা তার লাস্ট কার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। ব্লক লিস্টে কারা আছে। মৃত্যুর পর কেউ কোন কমেন্ট দিচ্ছে কিনা এসব।

পত্রপত্রিকায় বিখ্যাত কারো মৃত্যুর খবর দেখলেই ও সাথে সাথে তার একাউন্টে ঢুকার জন্য ঝাপিয়ে পড়ত। কাজটাতে ও একধরনের আনন্দ পেতো।

লেভেল ৪ এ উঠার পর হঠাত এক দূর্ঘটনায় আমাদের এক বন্ধু মারা গেল। তারপর প্রায় বছর খানেক পরে ও অনেক চেষ্টা চরিত করে মৃত বন্ধুটির ফেসবুক একাউন্টে ঢুকল। ঢুকে ওর মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করল। এক ধরনের ভয় ওকে জড়িয়ে ধরল। মনে হলো মৃত বন্ধুটি তার সমস্ত কর্মকান্ড দেখতে পাচ্ছে। মৃত বন্ধুটির একটা মেয়েবন্ধু ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সেই মেয়েবন্ধুটি গত একবছরের প্রতিটা দিন ওর ইনবক্সে একটা করে মেসেজ পাঠাত। মেসেজ গুলো ছিলো আবেগ আর ভালোবাসার চাদরে জড়ানো। একজন মানুষ মারা যাওয়ার এক বছর পরেও তার প্রিয়জন–ভালোবাসার মানুষটি তাকে একদিনের জন্যও ভূলতে পারেনি। প্রতিদিন একটা করে মেসেজ পাঠাচ্ছে। এতো ভালোবাসা একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে দেখাতে পারে এটা ভেবে ও খুব অবাক হলো। ওর মধ্যে এক ধরনের অনুশোচনাবোধ জন্ম নিল। ওর মনে হলো ও মৃত মানুষগুলার সাথে এক ধরনের প্রতারণা করছে। তাদের স্বজনদের সাথে প্রতারনা করছে। কারো ভালোবাসার মানুষের কাছে লেখা আবেগজড়ানো শব্দগুলা পড়ার বা দেখার তার কোন অধিকার নেই।

এরপর থেকে ও আর কখনো কোন মৃত মানুষের ফেসবুক হ্যাক করেনি।

Leave a Reply