Menu
Categories
তাবিজ
September 21, 2023 বুয়েট লাইফ

আমার বন্ধু আনিস। খুবই ভালো ছাত্র। সারা জীবনে কখনো
দ্বিতীয় হয়নি। বুয়েটে ভর্তি হয়ে প্রথম টার্মটা কিভাবে যেব খুব খারাপ করে
ফেলল। সে অসম্ভব চিন্তায় পড়ে গেল। তার নাকি পড়াশুনায়
মন বসেনা। আমি বললাম, “দোস্ত চিন্তার কিছু নাই, আমি
ব্যবস্থা করছি।” ও উল্লসিত হয়ে বলল, “কী ব্যবস্থা
তাড়াতাড়ি বল্‌।”
-“দোস্ত তোর পড়ালেখার জন্য তাবিজ লাগবে।আমাদের
এলাকায় এক গুরু আছে। অনেক বড় পীর। তার তাবিজে ভালো
হয়নি কেউ, এমন কথা শুনিনি।”
-“বলিস কী!সত্যি বলছিস?”
-“আরে মামা তাবিজ দেয়ার সাথে সাথেই
তোমার ২৪ ঘন্টায় ২৬ ঘন্টা পড়তে ইচ্ছা করবে”

-“তাহলে আজকেই চল্‌ তাবিজটা নিয়ে আসি।তাড়াতাড়ি
পড়াশুনা ধরা দরকার।”
-“না দোস্‌ আজকে যাওয়া যাবেনা, কারন গুরু বুধবার ছাড়া
তাবিজ দেননা । তাছাড়া আমি একা যেতে হবে। তুই গেলে তাবিজ
দিবেনা। রাগী অনেক। সবাইকে তাবিজ দেয় না।”
-“আচ্ছা তুইই যা।কত লাগবে?”
-“দোস্‌ গুরু তো টাকা নেয়না। বোতল খায়। একটা বোতল নিতে
হবে। হাজারখানিক লাগবে। ব্ল্যাক মার্কেট থেকে নিবো।”


আনিস একহাজার টাকার কথা শুনে প্রথমে ঘাবড়ে গেল। পরে
রাজি হল।
-“যা নে একহাজার ।গুরুরে আমার কথা বলিস।ভালো দেখে
আনিস।”
-“আচ্ছা দোস্‌ চিন্তা করিস না।আমি দেখছি।”


বুধবারে আনিসের কাছ থেকে একহাজার টাকা নিয়ে সোজা
পলাশী বাজার চলে গেলাম।দোকান ঘুরে একটা তাবিজের ঠোল
কিনলাম। একটা সাদা কাগজ,লাল কলম,সুঁতা ,মোম, ম্যাচ
কিনলাম। তারপর এক জায়গায় বসে কাগজটাকে কেঁটে ছোট
করলাম। ছোট একটা টুকরায় একটা টেবিল আঁকলাম। তারপর

টেবিলের ঘর গুলাতে আরবী বর্ণ মালার অক্ষর গুলোকে
এলোমেলো করে লিখে দিলাম। তারপর কাগজটা ভাঁজ করে সুতা
দিয়ে বেধেঁ ঠোলের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম। ঠোলের মুখটা মোম
গলিয়ে বন্ধ করে দিলাম।হয়ে গেলো তাবিজ তৈরীর কাজ।
ছোটবেলায় আম্মা যখন আমার হাতে তাবিজ বেধেঁ দিতো আমি
পরে খুলে খুলে সব দেখতাম। এভাবেই তাবিজ বানানো আয়ত্তে
এসে যায়।


আনিস কে তাবিজ দিয়ে বললাম , “নে গুরু অনেক যত্ন করে
তাবিজ বানাইছে। তাবিজ পরার সাথে সাথেই অগ্রগতি। পড়তে
পড়তে পাগল হয়ে যাবি।”
-“তাহলে দে এখনি পরে ফেলি।”
-“না না এখন পরা যাবেনা।শুক্রবার ভোরে সূর্য উঠার আগে
পূব আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতে বাধঁতে হবে। তারপর কাজ
করবে। আর তাবিজ নিয়ে নাপাক জায়গায় যেতে নিষেধ করেছে
গুরু এবং ভুলেও তাবিজ খোলা যাবেনা । তাহলে মহাবিপদ।”
ও খুশিতে গদগদ করে উঠল।আমি বললাম, “এখন আমার ভাড়া
আর নাস্তা খরচ বাবদ পাচশ’ টাকা দে। অনেক কষ্ট করতে
হইছে। শুধু তোর জন্য বলেই করলাম।” ও প্রথমে না না

করলেও পরে তিনশ’ টাকা দিলো। পরে ওর একহাজার টাকা
দিয়ে আমরা বন্ধুরা ষ্টার রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করেছিলাম।


এক সপ্তাহ পর আনিস এসে বলল, “দোস্‌ গুরুর তাবিজ তো
হেভ্‌ভী কাজে দিছে। সারাদিনই পড়ছি। আমার রুমের রানা বলছে
ওর ও একটা লাগবে। ওর নাকি আমার মতো পড়াশুনায় মন
বসছে না।”

পরের টার্মে আনিসের রেজাল্ট ছিল ৩.৮৭/৪.০০.

(মূল লেখাটি ২০০৯ সালে সেবা প্রকাশনীর রহস্য পত্রিকায় প্রকাশিত)

#গল্প #জাহের_ওয়াসিম

Comments are closed
*