ছোটবেলায় যেভাবে বাবা-মার টাকা মারতাম !

money >> আমাদের বাসায় পাশে একটা দোকান ছিলো। ওইটা ছিলো আমাদের বাকি দোকান। আম্মার কাছে টাকা না থাকলে ওই দোকান থেকে বাজার, সদাই, বিস্কুট – চানাচুর , চকোলেট, কোক, চাল-ডাল এসব আনতাম। একটা খাতায় লিখে রাখত। মাস শেষে আব্বু একসাথে দিয়ে দিতো।

তো আমার কাছে টাকা থাকলেই, হয় কিছু খাইতাম নাহয় মোস্তফা গেম খেলতাম কয়েন কিনে। এইজন্য টাকা শেষ হয়ে যেত তাড়াতাড়ি।

আম্মা হয়ত বলল, ওয়াসিম দুই কেজি চাইল নিয়া আয়। এই বলে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিলো। আর আমি বাকি দোকান থেকে চাল দুই কেজি বাকিতে নিয়ে আসতাম। সাথে চকোলেট আর কোক। বলতাম – আংকেল লিখে রাখেন । আর পঞ্চাশ টাকা হাপিস করে দিতাম।

আম্মার সামনে ভদ্রছেলের মতো চাল রেখে আড়ালে যেয়ে বাকিতে কিনা চকোলেট খেতাম। আর এক দৌড়ে পঞ্চাশ টাকার নোট নিয়ে বাইরে চলে যেতাম মোস্তফা খেলতে 🙂

>> বাসায় কোন বাল্ব নষ্ট হলে রেখে দিতাম। পরে কখনো টাকা দরকার হলে আম্মার অগোচরে নষ্ট বাল্বটা লাগিয়ে ভালটা খুলে ফেলতাম। তারপর আম্মাকে বলতাম , আম্মা লাইট ফিউজ – টাকা দাও লাইট কিনে আনি। আম্মা আমাকে কোন সন্দেহ না করেই বিশ টাকা দিয়ে দিতো বাল্ব আনতে। আমি এবার পুরান নষ্ট বাল্ব খুলে ভালোটা লাগাই দিতাম। আর টাকাটা গায়েব করে দিতাম 🙂

>> আমার আম্মা প্রায়ই এক হুজুরের বাসায় যেতেন দোয়া নিতে। ১৯৯৫ এর দিকে
ধানমন্ডির শংকরে এক হুজুর বসতেন। বিশাল আসর। অনেক লোকজন আসতো পানি পড়া নিতে। হুজুর উনার একটা গামছায় ফু দিয়ে রাখতেন। এরপর ওই গামছা দিয়ে জাস্ট পানির বোতলের উপর বাতাস করা হত। এতো মানুষ আসতো যে সব পানিতে ফু দিতে গেলে হুজুর গলা শুকাইয়া মারা যাবে 😀

যাইহোক আমার আম্মা আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে যাইতেন হুজুরের বাসায়। অনেক সময় রেখে যাইতেন। আর বলতেন, তোমার আব্বুরে বইলোনা । বাবা
আমার । সোনামনি। আমি বলতাম, টাকা দাও নাইলে বইলা দিমু। তখন আম্মা বিশ টাকা ধরাই দিয়া বলতেন – বলিস না সোনা।

একদিন আম্মা নাই। আব্বু আসছে বাসায়। কয় তোমার আম্মা কই। আমি বললাম- বলা যাবেনা। আব্বু হেসে বলল, তোমার আম্মা কত দিসে বলো – আমি আরো বেশী দিব। বলনা বাবা। তারপর আমি বলতাম – ১০০ টাকা দাও বলতেছি। আব্বু মুচকি হেসে ১০০ টাকার একটা নোট ধরায় দিত। আমি চিল্লায়ে বলতাম – আম্মা হুজুরের বাড়িতে গেছে 😀

Leave a Reply