কোন আকারের বিল্ডিং ভূমিকম্প সহনীয়?

ভূমিকম্পের জন্য ঝুকিপূর্ন আকৃতি

বিল্ডিং যাতে ভূমিকম্পে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে তার জন্য বিল্ডিংয়ের প্ল্যানের শেইপটা খুব জরুরী। বিল্ডিংয়ের প্ল্যানের শেইপ যদি ইংরেজী হরফ L, T, H, U, O কিংবা প্লাস (+) শেইপের হয় তাহলে বিল্ডিংয়ের ভিতরের কর্নারে স্ট্রেস কনসেন্ট্রেশন হয় যাকে ভূমিকম্প প্রকৌশলের ভাষায় রি-এনট্রান্ট কর্নার ইরেগুলারিটি বলে ।

এই ধরনের শেইপের কারনে দুইটা প্রবলেম তৈরী হয়। প্রথমত, “এল” শেইপের বিল্ডিংয়ের দুইটা উইং আলাদাভাবে মুভ করার চেষ্টা করে। তাই এলের দুইটা উইং আলাদা গতিতে মুভ করতে গিয়ে এদের মিলিত কর্নারে স্ট্রেস জমা হয়।

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে টরশন বা মোচড় তৈরী হওয়া। কারন বিভিন্ন দিক থেকে আসা ভূমিকম্পের বলের জন্য বিল্ডিংয়ের ওজনের কেন্দ্রবিন্দু ও বিল্ডিংয়ের রিজিডিটীর কেন্দ্রবিন্দু আলাদা হওয়ায় এই মোচড়ের উতপত্তি হয়। এর ফলশ্রুতিতে তৈরী হওয়া বলের হিসাব করা খুবই জটিল।

নিচে সংযুক্ত একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৬৪ সালের যুক্তরাষ্টের আলাস্কায় ভূমিকম্পের পর এই ধরনের এল শেপের স্কুল বিল্ডিংয়ের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

শহরাঞ্ছলের বিল্ডিং গুলাতে এল শেপের বিল্ডিং খুব জনপ্রিয়। খুব কমপ্যাক্ট জায়গার মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল, হোটেল কিংবা ইউনিভার্সিটির হল ডিজাইনের জন্য এই ফর্মগুলো খুব কাজে দেয়। কোটইয়ার্ড ফর্মের কারনে এই বিল্ডিংগুলাতে আলো-বাতাস পাওয়া যায় প্রচুর। তাই এই ধরনের ডিজাইন খুব পপুলার , অন্যদিকে ভূমিকম্পের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য আর্কিটেক্ট ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের ক্লোজ কলাবরেশন খুব জরুরী। অনেকগুলা পদ্ধতিতে এই সমস্যাকে মিনিমাইজ করা যায়। সবচেয়ে ভালো সমাধান হল আলাদা আলাদা উইংগুলোকে যদি স্ট্রাকচারালী সেপারেট করে ফেলা যায়। অথবা বিল্ডিংয়ের এই ভিতরের কোনাগুলা ৯০ ডিগ্রী না হয়ে আরো বড় আংগেলের স্প্লেইড দেয়া যেতে পারে। কিংবা কর্নারগুলাতে স্টিফার স্টাকচারাল ওয়াল দেয়া যেতে পারে।

সমাধানগুলো প্রত্যেকটাই প্রজেক্ট স্পেসিফিক। কারন আমাদেরকে এমন একটা সমাধান বের করতে হবে যেটা সবচেয়ে কম খরচে বিল্ডিং কোড মেনে , আর্কিটেকচারাল অ্যাসথেটিকস ঠিক রেখে ডিজাইন করতে সাহায্য করবে । একইসাথে বিল্ডিংয়ের সাইসমিক পারফর্মান্স ও ভালো হতে হবে।

একটা পারফেক্ট বিল্ডিংয়ের জন্য একজন দক্ষ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারকে অবশ্যই আর্কটেকচারাল ডিজাইন ও অ্যাসথেটিকস নিয়ে সিম্প্যাথেটিক ভূমিকা রাখতে হবে। একজন আর্কিটেক্টকে বিল্ডিংয়ের ফর্ম ঠিক করার সময় অবশ্যই ইরেগুলারিটি, স্ট্রেস কনসেন্ট্রেশন ও টরশনাল ইফেক্ট নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারন এক্সট্রিম ইরেগুলার বিল্ডিংয়ের জন্য যেই ক্রিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশন আসবে সেটা অনেক খরচসাপেক্ষ হবে। তাই আর্কিটেক্ট ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের পারফেক্ট কলাবরেশনে এমন বিল্ডিং ডিজাইন করা সম্ভব যেটা অ্যাসথেটিক্যালী বিউটিফুল বিল্ডিং হবে কিন্তু স্ট্রাকচারাল ইনটিগ্রিটিতে কোন ছাড় না দিয়েই।