‘অখণ্ড’ গল্পের দ্বিতীয় খণ্ড

friendship-bandsমানুষের সম্পর্ক অনেকটা নদীর মত। নদীর যেমন ‘এপার ভাঙে ওপার গড়ে’, সম্পর্কও তথৈবচ। গতিশীল মানুষ নানা প্রয়োজনে স্থান বদলায়, সে জায়গা ঘিরে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়। পুরনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কমে, কিছু সম্পর্কে জং ধরে; কিছু  হারিয়ে যায়। কিছু সম্পর্ক অবশ্য অটুট থাকে। এর মধ্যে কিছু গাঢ় হয়; গাঢ়তর হয়। এরকম সম্পর্কও নানা কারণে ভেঙে যেতে পারে। তারপরও কথা থাকে; সম্পর্ক থাকে। সেসবের ব্যাখ্যা হয় না। সংজ্ঞায় ফেলা যায় না।

ওয়াসিম ভাইকে নিয়ে দ্বিতীয় খণ্ড লিখছি। প্রথম খণ্ড লিখেছিলাম আরও তিন বছর আগে। তার সঙ্গে পরিচয়ের তিন বছরে। তখন হয়তো অনেক কিছুই লেখা গেছে। কিন্তু এখন কী লিখবো বুঝতেছি না। গল্পের যে শেষ নেই। ২০১২ হতে এ পর্যন্ত চারটি ডায়েরি যে খুঁজব সে অবকাশ আপাতত নেই। তবে শুক্রবারের (৩ জুলাই ২০১৫) ঘটনার জন্য তো ডায়েরি দেখার দরকার নেই। বলা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে প্রিয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে বেরিয়েছি দুই বছরের বেশি হয়ে গেছে। সমকালে সাংবাদিকতার বয়সও কাগজে কলমে আড়াই বছর। দিন যত যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন বন্ধু, সহপাঠি, রুমমেট, বড় ভাই, ছোট ভাইদের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমছে। কারও কারও সঙ্গে আগের মতই আছে। আবার কিছু টিকে আছে ফেসবুকের অবদানে। যাহোক আমি বের হলাম এসএম হল থেকে ওয়াসিম ভাই বুয়েটের পাঠ চুকিয়ে আমার পরেই বের হয়েছেন আহসানউল্লাহ হল থেকে।

পলাশী বাজারের এপার-ওপার মানে কাছাকাছি হল থাকায় আগে যোগাযোগ, আড্ডা, কথাবার্তা সহজ ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই হল থেকে বের হওয়ার পর সেটা কঠিন হওয়ার কথা। কিন্তু সম্পর্ক বলে কথা। আমি হল থেকে বের হওয়ার পরও যতদিন তিনি বুয়েটে ছিলেন আমি ক্যাম্পাসে গেছি। উনি আমার নতুন ঠিকানা প্রথমত ফার্মগেটে আসতেন। আসতেন সমকালে। এরপর উনি হল  থেকে বের হওয়ার পরও স্বাভাবিক যোগাযোগই চলছে। মিরপুর আমার নতুন ঠিকানায় আসেন। সমকালেও সমান পদচারণা। এ ছাড়া নানা জায়গায় এক সঙ্গে ঘুরাঘুরি তো আছেই। অামার এই প্রোফাইল পিকচারটা তারই তোলা।

ওয়াসিম ভাই জাইকা ছেড়ে কাজ করছেন একটি প্রাইভেট ফার্মে। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। বিল্ডিং ডিজাইন করতে ভালো বাসেন। কাজের সূত্রে ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তবে দেখা কোন সপ্তাহেই মিস নাই। গত সপ্তাহে গেছেন নাটোর। এক প্রোজেক্টের কাজে।রমজানের কারণে উভয়ের শিডিউলে পরিবর্তন। দেখা হচ্ছিলো না কয়েকদিন। বৃহস্পতিবার রাতে ফিরেছেন নাটোরের কাজ সেরে। শুক্রবার তার অফিস বন্ধ। দুই দিনের সফরে কিছুটা ক্লান্ত। আমারও অফিসের ব্যস্ততা। ফোন দেওয়ার সুযোগ কম। শুক্রবার ইফতারের আধা ঘন্টা পর ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অফিসে আছি কি-না। বললাম হ্যা। যদিও কাজ আমার শেষ হয়নি। আসলেন দেখা হওয়াতে ভালো লাগলো। কিন্তু আসার সময় অবশ্য অাম অানতে ভুলেননি। নাটোরের আম।

সমস্যা হলো কথা বলবো সে সুযোগ নেই। পাতার কাজ শেষ হয়নি। সমকালের বড় ভাই, রোকন ভাই বললেন, ওয়াসিম থাকেন। আধা ঘন্টা লাগবে। অামিও থাকার কথাও বললাম। কারণ আড্ডা ছাড়াও উনার বাইকে করে বাসা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করি কীভাবে! কাজ শেষ করে রোকন ভাইসহ আড্ডা। সেখানে হাজির আমাদের সময়ের আলমগীর খন্দকারও। রোকন ভাই বললেন, বুঝছেন আলমগীর, মানিক যেখানে আছে সেখানে জাহের ওয়াসিম নাই- এরকমটা কখনোই হবে না। এ প্রসঙ্গে একটু বলি, অামার সঙ্গে যাদেরই ভালো সম্পর্ক মিশুক ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও আমার চেয়ে কম নয়।

সে ওয়াসিম ভাইয়ের জন্মদিন। তাকে শুভেচ্ছা জানানোর ভাষা আমার নেই। তারপরও সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে এই ছোট্ট নোট। যদিও কিছু না; নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার ক্ষুদ্র চেষ্টা। ওয়াসিম ভাই ভালো থাকবেন।

 

[ ৬ জুলাই ২০১৫ তে আমার জন্মদিন উপলক্ষে বন্ধু মাহফুজুর রহমান মানিকের লেখা অসামান্য উপহার]

লেখাটির ফেসবুক নোট লিংকঃ https://www.facebook.com/notes/962261483826310

মাহফুজ ভাইয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিতঃ http://mahfuzmanik.com/2015/07/birthday-wish-wasim-vai/

Leave a Reply