ঈদের কেক

eid cakeআজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগের কথা। ঈদের দিন। দীর্ঘদীন রোজা রেখে ক্লান্ত মানুষের মুখে হাসি। নতুন জামা পরে ঈদ্গাহে নামাজ পরতে যাওয়ার জন্য বাবার কাছে আবদার ধরছে ছোট বাচ্চারা। অন্যসময় ধমক-ধামক মারলেও আজকে নামাজে নিয়ে যাচ্ছেন সন্তানদের । হাসিমুখেই নিচ্ছেন। অনেকে এতোই ছোট যে, ঈদ্গাহে বাবার কোলে বসে হিসু করে দিচ্ছে। বাবা সেই লুংগি নিয়েই নামাজ শেষ করছেন। বাবার পাঞ্জাবীর পকেট টেনে ধরে রাখছে বাচ্চারা-ঈদের সেলামী চাই তাদের। বাবারা অবশ্য হতাশও করছেন না কাউকে। পকেট থেকে দু’টাকার কচকচে নোট বের করে দিচ্ছেন। বাচ্চাটা সেই নোট নিয়ে খুশিমনে দৌড় দিচ্ছে বাজারের দিকে। পোঁটকা-বাঁশি কিনতে। বাশির মুখে বেলুন লাগিয়ে ফুলানো। তারপর মুখ থেকে বের করে দিলে বেলুনের হাওয়া কমবে আর পোঁ-পোঁ আওয়াজ হবে। অনেক মজার ব্যাপার। বাঁশি বাজিয়ে সবার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে ওরা। কিন্তু আজকে বাবা-মারা কিছুই বলছেন না। অন্যসময় হলে মেরে আস্ত রাখতেন না। আজ ভাবছে- করুক না একটু মজা, ঈদের দিন। আমরা কতই না মজা করেছি! স্মৃতির গভীরে গিয়ে নষ্টালজিয়ায় ভুগছেন বাবা-মায়েরা। মনে মনে হাসছেন সুখ স্মৃতিগুলো মনে করে করে। কিন্তু আজকে একটি পরিবারের মুখে হাসি নেই। চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা।

একটি মহিলা প্রসব বেঁদনায় কাতঁরাচ্ছেন খুব। তার চিৎকারে পুরো বাড়ি একবার করে কেঁপে উঠছে। মহিলাটির স্বামী খুবই চিন্তিত। কারন সাত মাসেই বাচ্চাটা দুনিয়াতে চলে আসছে। আল্লায় জানে বাঁচবে কিনা। ওয়াও ওয়াও শব্দ শুনে লোকটা স্বস্তি খুঁজে পেল। মুখে হাসি ফিরে এলো। তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে বাচ্চাকে কোলে নিল। বাচ্চার সুন্দর মুখটা দেখে তার মুখের হাসিটা চওড়া হল আরো। বাচ্চার মার অবস্থা ভালোনা। অনেক ধকল গেছে তার উপর।

এভাবেই  জন্ম হয় হাসানের । বাবা যখন আমাকে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে যান হেডস্যার জিজ্ঞেস করল, ছেলের জন্মতারিখ? বাবা নির্বিকার মুখে বললেন, শাওয়ালের এক তারিখ। স্যার ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ফাইজলামি করেন? ইংরেজী মাস বলেন। ওর বাবা বললেন, স্যার আমি অশিক্ষিত মানুষ। মাস তারিখ খেয়াল নাই। শুধু মনে আছে ঈদের দিন হইছে। রমজানের ঈদ।

রোজার ঈদে ওদের  খুব মজা হয়। সবাই জন্মদিন পালন করে ইংরেজী তারিখে। ওরটা  হয় আরবীতে। ঈদের দিনে। সেমাই খেয়ে জন্মোৎসব। কারন কেক কেনার মত টাকা ওর  বাবার নেই।

Leave a Reply